ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে সিনিয়র সিটিজেন সেভিং স্কিমটি রয়েছে কেবলমাত্র অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সুবিধার জন্য। এই স্কিমের মাধ্যমে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা অনায়াসেই আয় করা যায়। এই সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম এর সুবিধা ভোগ করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন? কিভাবে আবেদন করতে হবে? প্রভৃতি জানার জন্য আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। India Post SCSS Scheme
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমটি কি ( India Post SCSS Scheme) ?
অবসরপ্রাপ্ত মানুষের বৃদ্ধ বয়সে প্রতি মাসের ইনকামের উৎস হিসাবে এটিকে কেন্দ্র সরকার চালু করেছিল। ২০০৪ সালে প্রথম এই স্কিমটির উৎপত্তি হয়। এই স্কিমে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ঝুঁকি বিহীন এর সাথে রিটার্নের সময়ও মোটা টাকা পাওয়া যায়।
সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিম এর সুবিধা ( India Post SCSS Scheme)
সুবিধা গুলি হল গুলি হল
১) সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমটির পরিচালনার দায়িত্ব রয়েছে ভারত সরকারের হাতে।
২) এই স্কিমে বিনিয়োগ সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং ভালো সুদ পাওয়া যায়।
৩) প্রতিমাসে মোটা টাকা আয় করা যায়।
৪) যেকোনো ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে গিয়ে খুব সহজেই সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের অ্যাকাউন্ট ওপেন করা যায়।
কারা সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন ( India Post SCSS Scheme) –
১) সিনিয়র সিটিজেন স্কীমের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য একজন ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর হতে হবে।
২) যে সকল ব্যক্তিরা ৫৫ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেছেন কিন্তু তখনও তাদের ষাট বছর বয়স হয়নি, তারাও কিন্তু এই সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত প্রযোজ্য রয়েছে। ওই ব্যক্তিদের চাকরি থেকে অবসর নেয়ার এক মাসের মধ্যেই এই স্কিমের অ্যাকাউন্ট খোলার দরখাস্ত জমা করতে হবে।
৩) একজন ভারতীয় সৈনিক তিনি সিনিয়র সিটিজেনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন ৫০ বছর বয়স পেরোলেই। তবে রিটায়ার্ড করার এক মাসের মধ্যেই এই অ্যাকাউন্ট খোলার দরখাস্ত জমা করতে হবে।
যৌথভাবে এই অ্যাকাউন্ট খোলা যায়?
এই সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্টটি যৌথভাবেও খোলা যায়। তবে সেক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে স্বামী বা স্ত্রী দুইজনের নামে অ্যাকাউন্টটি ওপেন করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে কিন্তু ছেলে বা মেয়ের সাথে অ্যাকাউন্টটি খোলা যাবে না।
কোথায় সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের একাউন্ট খুলতে পারবেন-
সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্টটি আপনি পোস্ট অফিস বা ব্যাংকে গিয়ে খুলতে পারবেন। যে ব্যাংকগুলিতে এই সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্টটি খোলা যায় সেগুলি হল-
ব্যাংকের নাম
State Bank of India,Bank of Baroda,Andhra Bank,corporation Bank,Indian Overseas Bank,Central Bank of India,IDBI Bank,State Bank of India, Jaipur State Bank of Travancore,Syndicate Bank,Union Bank of India,ICICI Bank,Bank of Baroda, Maharashtra Bank of India,Canara Bank,Dena Bank,Indian Bank,UCO Bank, Punjab National Bank,State Bank of Mysore,State Bank of Patiala Vijaya Bank,State Bank of Hyderabad
সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্টটি খোলার জন্য যে ডকুমেন্টসগুলির প্রয়োজন হবে সেগুলি হল– ১) ভোটার কার্ড ২) রেশন কার্ড ৩) জন্ম সার্টিফিকেট ৪) ড্রাইভিং লাইসেন্স ৫) আধার কার্ড ৬) প্যান কার্ড ৭) স্থায়ী বাসিন্দার সার্টিফিকেট ৮) KYC form ৯) পাসপোর্ট সাইজ ফটোগ্রাফ ১০) সিনিয়র সিটিজেন সেভিংস স্কিমের ফর্ম।
সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্টটি কীভাবে খোলা যাবে?
সিনিয়র সিটিজেন অ্যাকাউন্টের ফর্মটি সংগ্রহ করে সেটিকে ফিলাপ করে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর সহিত ব্যাংক বা পোস্ট অফিসে গিয়ে জমা করলে অ্যাকাউন্টে খোলা যাবে।
ডিপোজিট লিমিট- এই অ্যাকাউন্টটি খোলার জন্য সর্বনিম্ন ডিপোজিট এর পরিমাণ হলো ১০০০ টাকা। এই অ্যাকাউন্টে সকল সময়ই ইনভেস্ট করতে হয় ১০০০ টাকার গুণিতক পরিমাণকে। ২০০০, ৩০০০ এইভাবে ডিপোজিট করা যাবে। ১৫০০ বা ২৫০০ টাকা ডিপোজিট করা যাবে না। আর সর্বোচ্চ ডিপোজিট এর পরিমাণ হল ৩০ লক্ষ টাকা।
আয়কর ছাড়- আয়কর আইনের 80C অনুযায়ী এই স্কিমের মাধ্যমে কর ছাড়ের কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। যদি বছরের সুদের পরিমাণ ৫০ হাজার টাকার বেশি হয় তখন তার থেকে TDS কাটা হয়। এই স্কিমের সুদটি হল করযোগ্য।
২০২৪ সালে সিনিয়র সিটিজেন স্কিমের সুদের পরিমাণ কত?
এই অ্যাকাউন্টে কোয়াটারলি ইন্টারেস্ট পাওয়া যায়। বছরের চারবার ইন্টারেস্ট ক্রেডিট হয়- ৩১ শে মার্চ, ৩০ শে জুন , ৩০ শে সেপ্টেম্বর , ৩১শে ডিসেম্বর। বর্তমান সময়ে এই স্কিমের রেট চলছে ৮.২%। এই সুদটি চলবে ১লা এপ্রিল থেকে ৩০শে জুন পর্যন্ত।
এই সিনিয়র সিটিজেন স্কিমে যদি ৩০ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করা হয় তাহলে পাঁচ বছর পর মোটা টাকা রিটার্ন পাওয়া যায়। ৮.২% হারে পাঁচ বছর পর ইন্টারেস্ট পাওয়া যায় ১২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। প্রত্যেক কোয়ার্টারে ইন্টারেস্টের টাকা পাওয়া যায় ৬১ হাজার ৫০০ টাকা। হিসাব করলে দেখা যায় আপনি প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারছেন।
প্রিম্যাচিওর ক্লোজার– এই স্কিমে টাকা ম্যাচিওর হয় পাঁচ বছরে। পাঁচ বছরের আগে যদি টাকা তুলে নিতে চান অর্থাৎ প্রিম্যাচিউর করতে চান তাহলে আপনার আসল টাকা থেকে কিছু টাকা কেটে নেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে প্রিম্যাচিউর করলে যে টাকাটি আপনি সুদ হিসেবে পেয়েছেন সেই টাকাটি কেটে নেওয়া হবে। দুই বছরের মধ্যে প্রিম্যাচিউর করতে চাইলে ১.৫ % টাকা মূলধন থেকে কেটে নেওয়া হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে প্রিম্যাচিউর করতে চাইলে মূলধন থেকে ১ শতাংশ টাকা কাটা হয়। কিন্তু যদি পাঁচ বছরের পর এক্সটেনশন করা হয় এবং এক্সটেনশনের পরে টাকাটি তুললে আপনার মূলধন থেকে কোনো টাকা কাটা হয় না।
অ্যাকাউন্ট চলাকালীন সময়ে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মৃত্যু হলে কি হবে?
এই স্কিমের বিনিয়োগ করার পর যদি অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের মৃত্যু হয় তাহলে অ্যাকাউন্টটি যদি গ্রাহকের একার নামে থাকে তবে নমিনি করা ব্যক্তিটি অ্যাকাউন্টটি চালাতে পারবেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ইনটারেস্ট রেটের পার্থক্য হবে। নমিনি করা ব্যক্তিটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের ইন্টারেস্ট এর রেটে সুদ পাবেন। এক্ষেত্রে সিনিয়র সিটিজেন স্কীম এর সুদ অনুযায়ী তিনি সুদ পাবেন না। অপরদিকে গ্রাহকটির অ্যাকাউন্টটি যদি জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট হয় সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় নামের ব্যক্তিটি যদি সিনিয়র সিটিজেন স্কিমের সমস্ত শর্ত পূরণ করে থাকেন তাহলে তিনি সিনিয়র সিটিজেন স্কিমের সুদ অনুযায়ী সুদ পেতে পারেন।
এক্সটেনশন পদ্ধতি- সিনিয়র সিটিজেন স্কিমটি ম্যাচিওর হওয়ার পরে আপনি এক বছর বা তিন বছরের জন্য এক্সটেনশন করতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখবেন যে আপনি সিনিয়র সিটিজেন স্কিমটি খোলার সময় যে ইন্টারেস্ট রেট পেয়েছিলেন সেই রেটটি নাও পেতে পারেন। এক্সটেনশন করার সময় সিনিয়র সিটিজেন স্কিমে যে রেট চলবে সেই রেটটি আপনি পাবেন। Written by Nupur Chattopadhyay
WhatsApp Channel | Join Now |
Telegram Channel | Join Now |